পপ সম্রাট আজম খান এর জীবনী ও অদেখা কিছু ছবি

শৈশব ও কৈশর –
বাবা আফতাব উদ্দিন আহমেদ ও মা জোবেদা খাতুন এর ঘর আলো করে ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার আজিমপুরে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। পরবর্তীতে সপরিবারে কমপালপুরে বসবাস শুরু করেন। তারা ছিলেন চার ভাই ও এক বোন।

আজম খানের স্কুল জীবন কেটেছে আজিমপুরের ঢাকেশ্বরী স্কুলে, পরবর্তীতে টিঅ্যান্ডটি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে পড়াশোনা করেন।
মুক্তিযুদ্ধ ও সংগীতজীবন –
ছোটবেলা থেকে গান গাইলেও আজম খান এর সংগীত জীবন শুরু হয় ১৯৬৭ সালে “ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী’ এর মাধ্যমে। এরপর ১৯৬৯ এর গণ অভ্যূথানে অংশ নেন। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি ও তার ভাইরা সক্রিয় ভাবে অংশ নেন। ভারতের মেঘালয় থেকে ট্রেনিং নিয়ে ২ নাম্বার সেক্টরে , মেজর খালেদ মোশারফের তত্বাবধানে যুদ্ধে যোগ দেন।

যুদ্ধ থেকে ফিরে বন্ধু নীলু, সাদেক ও মনসুর কে নিয়ে শুরু করেন ব্যান্ড “উচ্চারণ” । ১৯৭২ সালে তার ‘এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ ও ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুটি বিটিভিতে প্রচারের পর ব্যাপক প্রশংসিত হয়।
পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে বিটিভিতে ‘রেললাইনের ঐ বস্তিতে’ শিরোনামের গানটি গেয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় চলে আসেন তিনি।
এছাড়াও তার গাওয়া অন্যান্য জনপ্রিয় গান গুলোর মধ্যে রয়েছে- আমি যারে চাইরে, ওরে সালেকা ওরে মালেকা, পাপড়ি কেন বোঝেনা , আলাল ও দুলা, একসিডেন্ট, অনামিকা, অভিমানী, আসি আসি বলে, হাইকোর্টের মাজারে ইত্যাদি।
বৈবাহিক জীবন –
১৯৮১ সালের ১৪ জানুয়ারি শাহিদা খান এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

পরিবারে ২ কন্যা ( ইমা খান , অরণি খান ) ও এক পুত্র ( হৃদয় খান ) সন্তানের জনক ছিলেন।

মডেলিং ও সিনেমায় পপ সম্রাট –
আজম খানের প্রথম গানের এলবাম ‘ এক যুগ ‘ ১৯৮২ সালে মুক্তি পায়। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের ডিস্কো রেকর্ডিংয়ের এর ব্যানারে তার সিডি ক্যাসেট প্রকাশিত হয়। গানের পাশাপাশি ১৯৮৬ সালে ‘কালা বাউল’ নামে হিরামন সিরিজের নাটকে অভিনয় করেন। এছাড়াও, ২০০৩ সালে ‘গডফাদার’ নামক সিনেমায়ও অভিনয় করেন। ২০০৩ সালে ক্রাউন এনার্জি ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রথম মডেল হন আজম খান। সর্বশেষ ২০১০ সালে কোবরা ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছিলেন তিনি।

পুরস্কার ও সম্মাননা –
মৃত্যুর ৯ বছর পর ২০১৯ সালে আজম খান একুশে পদক অর্জন করেন। ১৯৯৩ সালে সেরা পপ শিল্পী পুরস্কার, ২০০২ সালে টেলিভিশন দর্শক পুরস্কার ছাড়াও দেশে বিদেশে আরো অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন। ২০১৩ সালে আজম খানের পরিবার দুস্থ শিল্পীদের জন্য আজম খান ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন।
মৃত্যু –
২০১০ সালে মুখে ক্যান্সার ধরা পড়লে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে থাকেন তিনি। এরপর ২০১১ সালের ৫ জুন ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৬১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় সমাহিত করা হয় গুণী এই শিল্পীকে।
রাজশাহীর এন্ড্রু কিশোর যেভাবে বাংলাদেশের প্লেব্যাক সম্রাট